সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে যুগোপযোগী করা হচ্ছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর হাতে রয়েছে মাদক ব্যবসায়ী ও বহনকারীদের তালিকা, যা প্রকাশ করা হবে মিডিয়ায়। আইনের আওতায় নিয়ে আসা হচ্ছে হালের সিসাকে। কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে সিসা বারগুলোর বিরুদ্ধে। মাদক ব্যবসায়ী, বহনকারী ও সিসা বারের বিরুদ্ধে দেশব্যাপী চলবে যৌথ অভিযান। মাদককে নির্মূল করতেই সরকার এসব পদক্ষেপ নিচ্ছে। এরই অংশ হিসেবে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনের পাশাপাশি মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরকেও পুনর্গঠন করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে আইনের খসড়া তৈরি করে সংশ্লিষ্ট সবার মতামত নেওয়া হচ্ছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, মাদক ব্যবসায়ীদের একটি সমন্বিত তালিকা তৈরি করা হয়েছে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর, পুলিশ, র্যাব, বিজিবি, কোস্টগার্ড, ডিজিএফআই ও এনএসআই পৃথকভাবে এ তালিকা তৈরি করেছে। এর মধ্যে কমপক্ষে তিনটি তালিকায় যাদের নাম থাকবে সেসব ব্যবসায়ীকে ‘এ’ ক্যাটাগরিতে ফেলা হবে। একইভাবে আরও দুটি তালিকা ‘বি’ ও ‘সি’ ক্যাটাগরির মাদক ব্যবসায়ী ও বহনকারীর জন্য। ইতিমধ্যে এ তালিকা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের হাতে পৌঁছেছে বলে জানা গেছে। সম্প্রতি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ বোর্ডের সভায় এমন তথ্যই দিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে মাদক ব্যবসায়ী ও বহনকারী যে বা যারাই হোক তাদের আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করার। কোনো রাজনৈতিক পরিচয়কে প্রাধান্য না দেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন। এ কারণে সরকার ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মাদকের বিরুদ্ধে একেবারেই ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি গ্রহণ করেছে। জানা গেছে, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ বোর্ডের সভায়ও এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ের বার্তা পৌঁছে দিয়েছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সংশ্লিষ্টদের।
শুধু তাই নয়, হালের সিসার বিরুদ্ধেও কঠোর অবস্থানে সরকার। সাম্প্রতিক বছরে রাজধানী ঢাকার অভিজাত এলাকাগুলোয় যেসব সিসা বার গড়ে উঠেছে সেগুলোয় সন্ধ্যার পরই নেশায় বুঁদ হয়ে যায় অভিজাত পরিবারগুলোর তরুণ-তরুণীরা, যার বেশির ভাগই স্কুল, কলেজ ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া। বিষয়টি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নজরে আসার পর সরকার এ ব্যাপারে নজরদারি বাড়িয়েছে। এমনকি অনেক স্থানে অভিযান চালিয়ে সিসা সেবনের উপকরণও জব্দ করা হয়েছে। এখন এই মাদককে সমূলে উৎপাটনে সরকার সিসাকে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের আওতায় এনে কঠোর অবস্থান নিতে যাচ্ছে। প্রস্তাবিত মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে ইতিমধ্যেই এটি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে বলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, মাদকের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানের অংশ হিসেবে ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ায় বিজ্ঞাপন প্রচারের বিষয়েও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে সরকার। মার্চজুড়ে এ প্রচার চালানো হবে দেশের সব জেলা-উপজেলা পর্যায়ে। মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সরকার মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনকে আরও যুগোপযোগী করতে প্রস্তাবিত মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০১৮-এর খসড়া তৈরি করেছে। আরও মতামতের জন্য সেটি সংশ্লিষ্টদের কাছে পাঠানো হয়েছে। এর পাশাপাশি মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরকেও শক্তিশালী করা হচ্ছে। পুনর্গঠিত সাংগঠনিক কাঠামোর আওতায় খুব দ্রুতই জনবল নিয়োগ করা হবে। দেশের জেলাগুলোকে এ, বি ও সি ক্যাটাগরিতে ভাগ করে প্রতি জেলায় ৪৬ জনবল দিয়ে নতুন ৮ হাজার ৫০৫টি পদ সৃজন করা, যানবাহন, অফিস সরঞ্জামাদি ও লজিস্টিক সহায়তা বৃদ্ধিকরণের প্রস্তাব এবং ‘ইয়াবা সীমান্ত’ হিসেবে পরিচিত হয়ে ওঠা কক্সবাজারের টেকনাফে বিশেষ জোন স্থাপনের জন্য একটি প্রস্তাব জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে রয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, এ প্রস্তাব দ্রুত অনুমোদনের জন্য চেষ্টা করা হচ্ছে। অনুমোদন পেলেই জনবল নিয়োগসহ সব প্রক্রিয়া দ্রুততার সঙ্গে সম্পন্ন করা হবে।
- ব্রেকিংবিডিনিউজ২৪ / ০৯ জুন ২০১৮ / তানজিল আহমেদ